সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:২২ অপরাহ্ন

বান্দারবানে কলা গাছের সুতা দিয়ে তৈরি হলো জামদানি ডিজাইনের শাড়ি

বান্দারবানে কলা গাছের সুতা দিয়ে তৈরি হলো জামদানি ডিজাইনের শাড়ি

স্বদেশ ডেস্ক:

বান্দারবানে কলা গাছের সুতা দিয়ে তৈরি করা হয়েছে জামদানি ডিজাইনের শাড়ি। জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজির উদ্যোগে এ কাজটি করেন মনিপুরী রাধা বতি দেবী।

জানা যায়, জেলা প্রশাসকের নেয়া একটি পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে মনিপুরী নারীরা কলা গাছের সুতা দিয়ে শাড়ি তৈরি করে দেখিয়েছেন। বান্দরবান শহরের কাছে কালাঘাটা মণিপুরী পল্লীতে এই শাড়িটি তৈরি করেছেন মনিপুরী রাধা বতি দেবী। দীর্ঘ ১৫ দিনের প্রচেষ্টায় তিনি এ শাড়ি তৈরিতে সফল হন। শাড়িটির ডিজাইন অনেকটাই জামদানি শাড়ির মতো। এই ডিজাইনকে মনিপুরীরা ‘মইরান’ বলে।

কলা গাছের সুতা দিয়ে বোনা এই শাড়ি নিয়ে এলাকায় হইচই পড়ে গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেড় বছর আগে বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি সর্বপ্রথম এ উদ্যোগ গ্রহণ করেন। নারীর কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার দিক লক্ষ্য রেখে প্রকল্পটিতে প্রথম দিকে সহায়তা দেয় বেসরকারি এনজিও সংস্থা ওয়ার্ল্ড ভিশন, গ্রাউস, উদ্দীপন ও লাফার্স। এছাড়া মহিলাবিষয়ক অধিদফতর ও উইমেন চেম্বার অব কমার্স নানাভাবে সহায়তা দিচ্ছে।

বর্তমানে কালাঘাটার গুণমনি মনিপুরী ও বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাইং সাইং উঃ নিনি দম্পতির বাসায় কলা গাছের সুতা দিয়ে শাড়ি ও নানা ধরনের হস্তশিল্প তৈরির কাজ চলছে।

নিনি জানান, প্রথম দিকে কলা গাছের আঁশ থেকে সুতা তৈরি দেখে তিনি শাড়ি ও হস্তশিল্প তৈরিতে আগ্রহ দেখান। সে হিসেবে তার মণিপুরী স্বামীর নিকট আত্মীয় মনিপুরী শিল্পীদের এনে প্রথমে নানা ধরনের হস্তশিল্প কলমদানি, টেবিল ম্যাট, ফাইল হোল্ডার, কানের দুলসহ নানান ধরনের হস্তশিল্প তৈরি করেন। পরে ওই সুতা দিয়ে তাতেঁ শাড়ি বানানোর উদ্যোগ নেন। কাঠের তৈরি তাঁত বানানো থেকে শুরু করে সুতা তৈরি, সবদিকে সহায়তা দেন জেলা প্রশাসক।

নিনি আরো জানান, শাড়ি বানানোর জন্য সুদূর সিলেটের মনিপুরী পাড়া থেকে নিয়ে আসা হয় ৬৫ বছর বয়সী অভিজ্ঞ তাঁতি রাধা বতি দেবীকে। দীর্ঘ চেষ্টা চালিয়ে শাড়ি তৈরিতে সফল হন তিনি।

রাধা বতি জানান, ‘৭৫ সাল থেকেই তিনি সুতা দিয়ে শাড়িসহ নানা কিছু তৈরি করতেন। কিন্তু কলা গাছের সুতা দিয়ে শাড়ি তৈরি ছিল তার কাছে একেবারেই নতুন। যেহেতু কলা গাছ থেকে সুতা তৈরি করা হয়ে গেছে, তাই ওই সুতা দিয়ে শাড়ি বানাতে আপত্তি নেই। জেলা প্রশাসকের অনুরোধের পর তিনি নেমে পড়েন কাজে। দীর্ঘ ১৫ দিনের চেষ্টায় আরো তিনজন সহযোগীকে নিয়ে তাতেঁ বসে তৈরি করে ফেলেন জামদানি ডিজাইনের এ শাড়ি।

সাধারণ সুতায় ৫০০ গ্রাম দিয়ে যেখানে একটি শাড়ি তৈরি করা যায়, সেখানে কলা গাছের সুতায় শাড়ি তৈরি করতে লাগে প্রায় এক কেজি সুতা।

এ শাড়ি দেখতে অনেকেই ছুটে আসছেন বাড়িতে। এ সফলতাকে অনেক উপভোগ করছেন বলে জানান রাধা বতি। তবে এই শাড়ি কতটুক স্থায়িত্ব পাবে, শাড়ি পরতে মানুষ কতটুকু স্বাচ্ছন্দ বোধ করবে, এটি নিয়ে তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেন।

কলা গাছের সুতা তৈরিতে গবেষণা করে ভালো সুতা তৈরি করতে পারলে আরো ভালো মানের শাড়ি তৈরি করা যাবে বলে জানান তিনি।

জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে কলা গাছের সুতা দিয়ে তৈরি নানা ধরনের হস্তশিল্প মানুষকে আকৃষ্ট করেছে। নানা জায়গায় তা সমাদৃত হয়েছে। এখন শাড়ি তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বান্দরবানের উৎপাদিত পণ্য দেশে-বিদেশে রফতানির পাশাপাশি গ্রামীণ নারীদের কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক সাফল্যে বড় অবদান রাখবে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877